মেনি/ভেদা মাছ (Nandus nandus)

এক সময় গ্রামে বসবাসকারী খেটে খাওয়া মানুষ বিভিন্ন খাল, বিল, ডোবা ও নিচু জমিতে জমে থাকা পানি থেকে মাছ সংগ্রহ করত। তাছাড়া বিত্তশালীদের পুকুর থেকে জাল দিয়ে, মাছ দিয়ে, বড়শি দিয়ে মাছ ধরত। দেশের মিঠাপানিতে ২৬০ প্রজাতির মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ি রয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক ও মানুষের সৃষ্ট নানা কারণে মিঠাপানির ১২ প্রজাতির মাছ চরম বিপন্ন,২৮ প্রজাতির মাছ বিপন্ন, ১৪ প্রজাতির মাছ সংকটাপন্ন, ৫৪ প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্ত এবং ৩০ প্রজাতির মাছ ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ, কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার এবং সর্বোপরী দেশের অভ্যন্তরে জলাশয়গুলিতে পানির পর্যাপ্ত অভাবকে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের মাছ বিলুপ্তির প্রধান কারন হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। বিলুপ্ত প্রায় মাছের মধ্যে রয়ছেে মেনি মাছ/ভেদা মাছ অন্যতম।

মেনি মাছ অনেকটা কই মাছের মত দেখতে। স্থানীয়ভাবে এটি ভেদা বা রয়না নামে পরচিতি। এই মাছটি একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়ে প্রচুর পরমিাণে পাওয়া গেলেও বর্তমানে এদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। ভেদা মাছ Nandidae গোত্রের Perciformes বর্গের মিঠাপানির মাছ। ভেদা মাছের ইংরেজী নাম Gangetic leaffish, বৈজ্ঞানিক নাম Nandus nandus। মাছটির দেহের রং কালচে সবুজ । দেহ পার্শ্বীয়ভাবে চাপা এবং দেহের দুপাশে হলুদ সবুঝাভ ডোরা থাকে। পাখনা সবুজাভ থেকে হলুদাভ বর্ণের হয়ে থাকে। দেহ টিনয়েড আঁইশ দ্বারা আবৃত থাকে। এর লেজ গোলাকার এবং মুখ তুলনামূলকভাবে বড়।

এরা প্রায় ২০ সে.মি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।খাল বিল, হাওড় বাওড় এবং নদীতে এরা বাস করে। এরা আবাসস্থলের তলদেশে কর্দমাক্ত পরিবেশে বসবাস করে। বর্ষাকালে প্লাবিত ধানক্ষেত বা পাটক্ষেতেও এদেরকে পাওয়া যায়। খাদ্যাভাসে এরা সাধারণত মাংশাসী ধরনের। এরা জলজ পোকামাকড়, পোকার লার্ভা, ছোট মাছ খেয়ে থাকে। এরা এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে প্রজনন করে থাকে।

Written specially and exclusively by Dr. A. K. M. Nazrul Kabir, Associate Professor, Zoology.

Leave a Reply